প্রথমেই আমরা জেনে নেব সাইলোজিক্যাল হ্যাক কী? সাইকোলজিক্যাল হ্যাক আসলে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে কাউকে হারানোকেই বোঝায়।

আরও সহজ করে বলা যায়, মস্তিষ্ককে ধোঁকা খাওয়ানো, কথার চতুরতা ইত্যাদি। অনেকটা ব্রেইন গেমের মতো। কাউকে মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সাইকোলজিক্যাল হ্যাক কাজে লাগে।

আজ আমরা এমন কিছু সাইকোলজিক্যাল হ্যাক সম্পর্কে জানব, যা আপনার জীবন চলার পথে আরও সুগম করবে। আপনার ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে যা মেনে চললে বা প্রয়োগ করলে অনেক লাভবান হবেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক—

১. কথা বলার সময় শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখতে চান? কিংবা কাউকে প্রশ্ন করে সত্য উদ্ঘাটন করতে চান?

তার চোখের দিকে তাকিয়ে আপনার প্রতিবিম্ব লক্ষ্য করে কথা বলুন, সে সম্মোহিত হয়ে যাবে। নার্ভাস ফিল করবে। যথাযথ জবাব দেবে। তবে এটা কেবল স্থির দণ্ডায়মান এবং আলোর বিপরীতে থাকলেই সম্ভব হয়।

২. কাউকে কোনো কাজের জন্য জিজ্ঞেস না করে অনুরোধ করুন।

যেমন ধরুন আমরা সচরাচর এমনভাবে প্রশ্ন করে থাকি, আপনি কি আমার এই কাজটি করে দিতে পারবেন? না, এভাবে প্রশ্ন করবেন না। সরাসরি অনুরোধ করবেন যে, দয়া করে আপনি আমার এই কাজটি করে দিন। দেখবেন তখন আর সে আপনাকে না করতে পারবে না। তাই কাউকে দিয়ে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়ার এই সাইকোলজিক্যাল হ্যাকটা অনেক কার্যকারী।

৩. অবহেলাকারীর সঙ্গে আই কন্টাক্ট করুন।

যখন আপনি কারও সঙ্গে একটানা কথা বলেন এবং সে আপনার কথায় মনোযোগী না হয় অর্থাৎ আপনাকে ইগনোর করার চেষ্টা করে তখন কিছুক্ষণের জন্য কথা বলা থামিয়ে দিন। তার দুই চোখে চোখ রাখবেন। চোখ নামাবেন না। ফলে সে ইতস্তত বোধ করবে এবং আবার আপনার কথায় মনোযোগী হবে।

৪. আপনার হাসিতেই অন্যকে সম্মোহিত করার শক্তি আছে, তাই হাসিটা নির্মল ও সুন্দর রাখুন।

৫. বক্তৃতা দেওয়ার সময় সঙ্গে পানির বোতল সামনে রাখুন।

অনেকে এমন আছেন যারা কোনো সমাবেশে জনসম্মুখে কথা বলতে গেলে নার্ভাস ফিল করেন। বারবার গলা শুকিয়ে যায়, কথা আটকে যায়। তারা সঙ্গে করে একটি পানির বোতল রাখতে পারেন। এতে গলা শুকিয়ে গেলে যেমন পানি পান করতে পারবেন, তেমন পানি খাওয়ার বিরতিতে আপনি ঠিক কী বলতে চান তা মনে করতে পারবেন।

তা ছাড়া পানি খাওয়ার ফলে, মুড রিফ্রেশ হবে, নার্ভ শিথিল হবে, আর আপনার বক্তৃতাও ভালো হবে। জনসম্মুখে কথা বলতে যারা নার্ভাস ফিল করেন, তারা এই সাইকোলজিটা ফলো করলে সুফল পাবেন।

৬. ডি মোটিভেশনকে মোটিভেশন হিসেবে ব্যবহার করুন।

ধরুন আপনি কাউকে দিয়ে আপনার কোনো কাজ করাবেন বা অন্য কেউ তাকে দিয়ে কোনো কাজ করাবে, তখন তাকে এভাবে বলবেন যে, ‘তুমি তো এই কাজ পারবেই না’। ‘তোমার দ্বারা হবে না, ছেড়ে দাও’।

তখন দেখবেন তার মনে কাজটা ভালো এবং সুন্দরভাবে করে দেওয়ার আগ্রহ জাগবে, সেটি জেদ করেই হোক, সে চাইবে কাজটা করে আপনাকে দেখিয়ে দিতে। আর বুঝিয়ে দিতে চাইবে— না সে পেরেছে, আপনি ভুল ছিলেন।

৭. দেহভঙ্গি দিয়ে সামনের জনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করুন।

যখন আপনি কারও সঙ্গে কথা বলবেন, তখন হালকা করে মাথা ও হাত নাড়িয়ে কথা বলবেন। এতে সামনের জন মনে করবে আপনি তার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ পাচ্ছেন বা আপনার তার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে।

এতে দেখবেন যার সাথে কথা বলবেন সে অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে এবং আপনার সাথে সবকিছু শেয়ার করবে। এই সাইকোলজিক্যাল হ্যাক মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করে। আপনার প্রিয় ব্যক্তির সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে এই টিপস ফলো করুন।

৮. সকালে চোখের ঘুম ঘুম ভাব দূর করতে চান?

সকালে যখন ঘুম ভাঙে, তখন চোখের ঘুম ভাব দূর করতে উঠে বসে পড়ুন। অতঃপর দুই হাত এপরে তুলে জোরে বলুন ‘ইয়ে’। খেলা দেখার সময় অনেকে তাদের এক্সসাইটমেন্ট যেভাবে প্রকাশ করে সেভাবে আরকি।

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটি আপনাকে সকালে রিফ্রেশ করতে অনেক কাজে দিবে। দেখবেন তৎক্ষণাৎ ঘুম ঘুম ভাব দূর হয়ে যাবে।

৯. অন্য কাজে মনোযোগী থাকা লোক দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নিন।

ধরুন, কেউ অনেক মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করছে। যেমন ফোনে অনেক মনোযোগ দিয়ে কারো সাথে কথা বলছে। তখন আপনি আপনার যে কোনো জিনিস তার হাতে ধরিয়ে দিতে পারবেন, যা সে মনে রাখতে পারবে না আপনি কখন দিয়েছেন। এমন করে নিজের কাজ আপনি তাকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারবেন। আবার উল্টোটাও হয় তার হাতে থাকা যে কোনো জিনিস আপনি নিয়ে নিতে পারবেন। এটিও সে মনে রাখতে পারবে না, সে কখন দিয়েছে।

১০. যখন কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে আপনি তখন তার জুতোর দিকে তাকাবেন।

রাস্তায় বা বাস গাড়িতে যখন কেউ এক দৃষ্টিতে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে, তখন আপনিও এক দৃষ্টিতে তার জুতার দিকে তাকিয়ে থাকবেন। চোখ সরাবেন না। দেখবেন তার মধ্যে ইতস্তত ভাব কাজ করবে, সে লজ্জাবোধ করবে। এবং তখন আপনার থেকে চোখ সরিয়ে নিতে একপ্রকার বাধ্য হবে। রাস্তাঘাটে বিশেষ করে মেয়েরা এই ট্রিকস টা ফলো করতে পারেন।

১১. চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ক্লান্তি দূর করুন।

যদি আপনার আগের দিন রাতে ভালো ঘুম না হয় আর আপনি অনেক ক্লান্ত থাকেন,তা হলে মনে মনে ভাববেন আপনার ভালো ঘুম হয়েছে আপনি মোটেও ক্লান্ত না।

শুনতে আজব লাগলেও, এটি কিন্তু শতভাগ কার্যকারী। কলোরাডো কলেজ একটি পরীক্ষা করে— ‘জার্নাল অফ এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি’ বই এ প্রকাশ করেছেন যে, আপনি যদি মনে করেন আপনি খুব ভালোভাবে রেস্ট নিয়েছেন এবং আপনার মধ্যে কোনো ক্লান্তি নেই, তা হলে আপনার ব্রেন খুব ভালো ভাবে কাজ করে, যা ১০০ শতাংশ প্রমাণিত।

১২. প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করার সঠিক সময় কোনটি?

মানুষ সবসময় দিনের শুরুর ঘটনা এবং শেষের ঘটনা মনে রাখে। মাঝখানে সারাদিন যা হয় তা কিন্তু এত একটা মনে রাখে না। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন কারো সাথে দেখা কিংবা জরুরি কোন মিটিং, চাকরির ইন্টারভিউ সকালে বা বিকালে করতে। এতে করে আপনার সাথে থাকা মানুষ আপনাকে সর্বদা মনে রাখবে।